আছাদুজ্জামানের ছেলে-স্ত্রীর আলিশান বাড়ি, দামি প্লট!

  20-06-2024 11:22PM



পিএনএস ডেস্ক: ছাত্র অবস্থাতেই আলিশান বাড়ির মালিক। আফতাবনগরে দামি প্লট ও ভাঙ্গায় রয়েছে এক একর জমি। এসব সম্পদের জন্য কোনো পরিশ্রম করতে হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আসিফ মাহাদীনের। জন্ম যেন সার্থক তার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ছেলে তিনি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে তার জ্ঞাতবহির্ভূত আয় ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দেশ ত্যাগ করেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। এরই মধ্যে তার ছোট ছেলের এসব সম্পদের নথি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

নথিতে দেখা যায়, আসিফ মাহাদীনের জন্ম ২০০০ সালের ২৭ নভেম্বর। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। রাজধানীর নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার ৮/এ রোডের ৬ নম্বর বাড়িটির মালিক তিনি। বাড়িটির বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।

এছাড়া আসিফ মাহাদীনের নামে আফতাবনগরে ৫ কাঠার একটি প্লট আছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। এছাড়াও তার নামে ১ একর জমি রয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায়।

জানা গেছে, আছাদুজ্জামান মিয়ার এই ছোট ছেলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। সে দেশেও তার বাবা বিভিন্ন সম্পত্তি গড়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

প্রকাশিত খবরে উল্লেখিত সম্পদের তুলনায় আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের প্রকৃত সম্পদ কত বেশি হতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আছাদুজ্জামানের সম্পদের বিবরণী-সংক্রান্ত কিছু নথিও এসেছে গণমাধ্যমের হাতে।

নথিগুলো বলছে, পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি রোডে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে, যার মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া আফতাবনগর ৩ নম্বর সেক্টরের এইচ ব্লকের ৮ নম্বর রোডের ৩৬ নম্বর প্লটে তার ২১ কাঠা জমি আছে। আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ ও ১৬৭ নম্বরে একটি ছয়তলা আলিশান বাড়ি রয়েছে। বর্তমানে বাড়িটি স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

এছাড়া আফরোজা জামানের নামে ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে তিনি বিশেষ কোটায় রাজউক থেকে একটি প্লট বরাদ্দ পান। অথচ রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই।

নথি অনুযায়ী, আফরোজা জামানের নামে গাজীপুর, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমির সন্ধান মিলেছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় তার নামে ১৩৭ শতাংশ জমি রয়েছে, যা কেনা হয়েছে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে। ২০২০ সালে একই এলাকার সাহারা মৌজায় তিনি ১৫ কাঠা জমি কেনেন। এছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় ৬০.৬০ একর জমি কেনেন তিনি।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় অন্তত দুটি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামান উভয় কোম্পানির অংশীদার এবং মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আসাদুজ্জামান ডিএমপি কমিশনার থাকাকালে রাজধানীর রুট পারমিট কমিটির প্রধান ছিলেন। নথি অনুসারে, তার আমলে মৌমিতা পরিবহনকে রুট পারমিট দেওয়া হয়।

মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান হারিসুর রহমান সোহান। তিনি আফরোজা জামানের সৎ ভাই। একসময় তিনি লেবার ভিসায় সৌদি আরবে গেলেও পরে বাংলাদেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেন।

এছাড়া আফরোজা জামান শেফার্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। এ কোম্পানির পরিচালক আসাদুজ্জামানের বড় ছেলে আসিফ শাহাদাত।

আছাদুজ্জামান সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ কিনেছেন এবং বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সরকারকে বিব্রত করতে পরিকল্পিতভাবে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিশের শীর্ষ পদগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। আইন রক্ষার পরিবর্তে এই কর্মকর্তারা ভক্ষকে পরিণত হয়েছেন।

উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দৃঢ় সংকল্প দুদকের আছে কিনা- সংশয় রেখে এসব বিষয়ে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন টিআইবির এই নির্বাহী পরিচালক।

দুর্নীতির অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া দুদকের কাজ মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন রিগ্যান বলেন, ‘সাংবাদিকরা দুদকের কাজ ১২ আনা করে দিচ্ছে, তারা দাগ, খতিয়ান, বাড়ি নম্বর বের করে দিচ্ছে। এরপরও যদি দুদক অনুসন্ধান করতে না পারে, সেটি তাদের কর্তব্যে অবহেলা বলে মনে করি।’

সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, ‘এখন দুদকের উচিত নিজ দায়িত্বে স্ব-উদ্যোগে সবকিছু সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা। আর তা যদি না পারে তাহলে মনে করতে হবে দুদক দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়েছে।’

সালাহ উদ্দিন রিগ্যান বলেন, ‘যেহেতু মানবজমিন, প্রথম আলো প্রত্রিকায় বিষয়টির রিপোর্ট এসেছে। একজন সাবেক ডিএমপি কমিশনার এত সম্পদ কোথা থেকে পেলেন, কীভাবে পেলেন- দুদকের তা অনুসন্ধান করা উচিত। দেখা উচিত- এই সম্পত্তি বৈধ না অবৈধভাবে উপার্জন করা।’---ডেইলি-বাংলাদেশ


এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন