পিএনএস ডেস্ক: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি একজন কট্টর ধর্মীয় নেতা ছিলেন। তিনি ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০২১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর মধ্য দিয়ে ইরানের সর্বত্র রক্ষণশীল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বিশেষ করে নারীদের মাথার চুল দেখানো পর্যন্ত বন্ধ করেন। এমন আচরণ করার কারণে কয়েকজন নারীকে আইনের অধীনে নেয়া হয়। নিরাপত্তা হেফাজতে তো মারাই যান আমিনি। ৬৩ বছর বয়সী রইসি ছিলেন বিচার বিভাগের প্রধান। তিনি ২০২১ সালের নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের পর সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। তবে এই নির্বাচনকে অনেকেই বিতর্কিত বলে মন্তব্য করেছেন।
কারণ, নির্বাচনে বহু প্রথম সারির উদারপন্থি এবং সংস্কারবাদী প্রার্থীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ইরান যখন মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটে, আঞ্চলিক উত্তেজনা তুঙ্গে এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার আলোচনা যখন অচলাবস্থায়, তখন তিনি দায়িত্বে আসেন। তবে তার ক্ষমতার সময়ে ২০২২ সালে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেখা দেয়। ইসরাইল ও ইরান সমর্থিত হামাসের মধ্যে বর্তমানে গাজায় যুদ্ধ চলছে। এ সময়েই ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ হয়ে যায় এক দফা। ১৯৮০’র দশকে রাজনৈতিক বন্দিদের গণহারে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় তার ভূমিকা তদন্তের দাবিতে অব্যাহতভাবে দাবি তোলেন বহু ইরানি এবং মানবাধিকারকর্মী।
ইব্রাহিম রইসির জন্ম ১৯৬০ সালে ইরানের মাশাদে। এটি ইরানের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর এবং শিয়া মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র মাজার এখানেই। তার পিতা ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা। যখন ইব্রাহিম রইসির বয়স ৫ বছর তখন তার পিতা মারা যান। রইসি শিয়া রীতি অনুযায়ী মাথায় কালো পাগড়ি পরেন। তিনি পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। ১৫ বছর বয়সে পবিত্র কোম শহরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়া শুরু করেন। ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি পশ্চিমা সমর্থিত শাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেন। ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় রেজা শাহ পাহলভিকে। এই বিপ্লবের পরে বিচার বিভাগে যোগ দেন রইসি। আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি বেশ কিছু শহরে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে আয়াতুল্লাহ খামেনি ইরানের প্রেসিডেন্ট হন। রইসির বয়স যখন মাত্র ২৫ বছর তখন তিনি তেহরানের ডেপুটি প্রসিকিউটর হন। এই সময়ে চারজন বিচারকের একজন হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এসব বিচারক ১৯৮৮ সালে গোপন ট্রাইব্যুনালে বসতেন। এই ট্রাইব্যুনাল ‘ডেথ কমিটি’ নামেও পরিচিত। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে জেল খাটছেন এমন কয়েক হাজার বন্দির আবার বিচার করা হয়। এর বেশির ভাগই ছিলেন বামপন্থি বিরোধী দল মুজাহিদিনে খালকের সদস্য। কি পরিমাণ মানুষকে এই বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। তবে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো বলে, প্রায় ৫ হাজার নারী-পুরুষকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে গণকবর দেয়া হয়েছে। কোথায় এই গণকবর দেয়া হয়েছে তাও কেউ জানেন না। ইসলামিক বিপ্লবের নেতারাও এই ফাঁসির কথা অস্বীকার করেননি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেন না তারা। এসব মৃত্যুদণ্ডে নিজের ভূমিকার কথা বার বার অস্বীকার করেছেন রইসি। তবে তিনি বলেছেন, আয়াতুল্লাহ খামেনির দেয়া ফতোয়ায় বৈধতা ছিল এসব।
২০১৬ সালে রইসি, বিচার বিভাগের কয়েকজন সদস্য এবং তখনকার ডেপুটি সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ হোসেন আলি মুন্তাজেরির মধ্যে ১৯৮৮ সালের একটি মিটিংয়ের অডিও টেপ ফাঁস হয়। এতে মুন্তাজেরিকে বলতে শোনা যায়, ইসলামিক বিপ্লবের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো ওই ফাঁসি দেয়ার ঘটনা। এক বছর পরে মুন্তাজেরি তার পদ হারান। খোমেনির মৃত্যুর পর সুপ্রিম নেতা হন আয়াতুল্লাহ খামেনি। ২০২১ সালে ওই গণফাঁসিতে তার ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রইসি বলেন, যদি একজন বিচারক, একজন প্রসিকিউটর জনগণের নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থান নেন, তাহলে তার প্রশংসা করা উচিত। এ পর্যন্ত যেসব পদে ছিলাম তাতে মানবাধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমি গর্ব অনুভব করি। সূত্র: বিবিসি
পিএনএস/আনোয়ার
কে ছিলেন ইব্রাহিম রইসি
20-05-2024 03:43PM