তেহরান ছাড়ছে ইরান? কিন্তু কেন

  20-02-2025 11:16AM


পিএনএস ডেস্ক: ইরান তাদের ২৫০ বছরের পুরনো রাজধানী তেহরানকে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে। সিদ্ধান্তটি নেওয়া হচ্ছে জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ, পানীয় জল ও বিদ্যুতের সংকটসহ নানান সমস্যার কারণে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় বর্তমান ইরান সরকার রাজধানী স্থানান্তরকেই বিকল্প হিসেবে ভাবছে।

ইতিহাসের এক জীবন্ত উপাখ্যান তেহরান। বহু ঐতিহাসিক নিদর্শনের ভূমি মরুর বুক চিরে জেগে ওঠা ৭৩০ বর্গকিলোমিটারের এই শহর ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পারস্য উপসাগরীয় ও আরব অঞ্চলের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ইরানের রাজধানী নগরী। ১৭৮৬ সালে কাজার সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে যাত্রা শুরু তেহরানের। ককেশাস অঞ্চলে ইরানি ভূখণ্ডের কাছাকাছি বলে তেহরানকে রাজধানী নগরী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কাজার সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম শাসক আগা মুহাম্মদ খান। মতান্তরে, তেহরান ১৭৯৬ সালে কাজার রাজবংশের আমলে রাজধানী হয়। ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং তেলের ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

সেই বহু ইতিহাসের সাক্ষী তেহরান থেকে ২৩৯ বছর পর রাজধানী সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে ইরান সরকার। এক কোটি ৬৮ লাখ মানুষের তেহরান মহানগরী ইরান ও পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। রাজধানীকেন্দ্রিক জনসংখ্যা বিস্ফোরণের জেরে নগরের প্রাণ নিভুনিভু। ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমি মোহাজিরানি বলেছেন, রাজধানী স্থানান্তরের বিষয়টি নতুন নয়। বরং এটি নিয়ে আলোচনা চলছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। প্রতিটি অঞ্চলে বসবাসযোগ্যতা নির্ভর করে সেটি কতদূর পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা সম্ভব, তার ওপর। তেহরানের ওপর ক্রমবর্ধনশীল জনসংখ্যার চাপ ভীষণ উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রায় ২৫০ বছরের জনসংখ্যার ভারে জীর্ণ তেহরানে খাবার জল ও বিদ্যুতের মতো মৌলিক পরিষেবার অবস্থা নাজুক। সমস্যার সমাধান হিসেবে রাজধানী সরিয়ে নেওয়াই বিকল্প মনে করছে ইরান সরকার। তেহরানের পর নতুন রাজধানী নিশ্চয়ই দক্ষিণের কোথাও হবে। প্রাথমিকভাবে, ইরান সরকার উপকূলীয় মাকরান অঞ্চলকে ভাবছে। ফাতেমি মোহাজিরানি বলেন, মাকরানের কথা আমরা ভাবছি। দু'টি পরিষদ আমরা গঠন করেছি। একটি পরিষদ রাজধানীর সম্ভাব্য সব সমস্যা পর্যালোচনা করছে, আরেকটি পরিষদ কাজ করছে সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার ওপর। দু'টি পরিষদই মাকরান অঞ্চলে সকল সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

রাজধানী স্থানান্তরের ঘটনা ইরানের ইতিহাসে অবশ্য নতুন নয়। খ্রিস্টপূর্ব ৬৭৮ সাল থেকে পারস্য নামে পরিচিত ইরানের ৩২তম রাজধানী তেহরান। তাৎক্ষণিক না হলেও অচিরেই মাকরানকে ৩৩তম রাজধানী পেতে যাচ্ছে ২৬০০ বছরের পুরনো দেশটি।

ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের মাকরান অঞ্চল ওমান উপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকা এখনও সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হয়নি। এটি বাণিজ্য ও সমুদ্রপথে যোগাযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, যা তেহরানের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমাবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তেহরান স্থানান্তরের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ থেকে কাঁচামাল পরিবহণ করে তেহরানে প্রক্রিয়াকরণ এবং তারপর রফতানির জন্য আবার দক্ষিণে ফেরত পাঠানো আমাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস করে।

তবে সমালোচক আলি গোলহাকি বলেছেন, আজাদি স্টেডিয়াম পুনর্নির্মাণ করতে ১৮ মাস সময় লাগে এবং খরচ হয় ২৪ মিলিয়ন ডলার। তবে রাজধানী স্থানান্তর করতে শতাব্দী লাগবে এবং খরচ হবে শত শত বিলিয়ন ডলার।

তেহরানের জনসংখ্যা আগামী ৩০ বছরে ২০ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেতে পারে, যা শহর চালানোর ক্ষেত্রকে অসম্ভব করে তুলবে। বায়ু দূষণ তেহরানের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ২০২২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর ২০ হাজার ৮০০ জন মারা যায়, যার মধ্যে ৬ হাজার ৪০০ জন তেহরানে।

এ ছাড়া তেহরান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। শহরের ৬০ শতাংশ বাড়ি ভূমিকম্পের মানদণ্ড পূরণ করে না। শহরটির মাটি প্রতি বছর গড়ে ২৫ সেন্টিমিটার ধসে পড়ছে। তথ্য: দ্য ওয়াল


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন