হাসিনা কতটা পৈশাচিক ছিল তা আমরা বুঝতে পারছি: সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর

পিএনএস ডেস্ক: লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা কতটা পৈশাচিক ছিল তা এখন আমরা বুঝতে পারছি। তিনি বিডিআর হত্যাকাণ্ড দিয়ে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছে। আমাদের র্যা ব, পুলিশ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরুর জন্য এই সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি আমরা বর্তমানে বিচার পাচ্ছি এবং ন্যায়বিচার পাবো বলেও আশা করছি।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ দায়ের ও শুনানি শেষে সোমবার (৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর তিনি সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন।

এর আগে জোরপূর্বক গুমের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১২ জনের মধ্যে সেনাবাহিনীর পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গ্রেফতার থাকায় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন তদন্ত রিপোর্ট এবং গ্রেফতার সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। বিভিন্ন সংস্থার মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযোগের শুনানিতে সবার নাম প্রকাশ করেননি চিফ প্রসিকিউটর।

গ্রেফতার ও তদন্তের স্বার্থে শুনানিতে সবার নাম প্রকাশ করেননি চিফ প্রসিকিউটর। তবে শেখ হাসিনাসহ চার আসামির নাম প্রকাশ করেন। অন্য তিন আসামি হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। এর মধ্যে জিয়াউল আহসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলায় গ্রেফতার আছেন।

আওয়ামী লীগ শাসনামলের গুমের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫০টির অধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলা করা হয়েছে। গুমের আগের দুটি মামলায় একটিতে রাঙামাটির পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুলের সাবেক পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন ফারুকীকে এবং আরেকটিতে বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সুবহান তরফদার, শাইখ মাহদী প্রমুখ। ট্রাইব্যুনালে যারা গুমের অভিযোগ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী, মাইকেল চাকমা প্রমুখ।

ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় গুম হওয়া ব্যক্তি, তাদের পরিবারের সদস্য এবং মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আদেশের পর ট্রাইব্যুনালের সামনে গুমের শিকার ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের চাচা মীর মাসুম আলী বলেন, ‘হঠাৎ করে শুনলাম তাকে গুম করা হয়েছে। তাকে তিন ও ছয় বছরের বাচ্চা ও বোনের সামনে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারপর থেকে ৮ বছর ধরে কোনোভাবেই তার বিষয়ে কোনো তথ্য পাচ্ছিলাম না। আমি ১৭ বছর দেশে আসতে পারিনি, একমাত্র আরমানের কারণে। এজন্য প্রসিকিউশন ও ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ, যাদের কারণে এই ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি।’

মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে অপেক্ষা করছিলাম, গুমের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হোক, বিচারের আওতায় আনা হোক। একটা ন্যায়বিচার, একটি স্বচ্ছ বিচার যেন আমরা দেখতে পারি। কারণ প্রত্যেকটা কেসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশ বলেন, র্যা ব বলেন, ডিজিএফআই বলেন- আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ছিল। তাদের যেন আইডেনটিফাই করা হয় এবং বিচারের আওতায় আনা হয়। আমাদের এই অপেক্ষাটা কিন্তু একযুগেরও বেশি।’

পিএনএস/রাশেদুল আলম