২৪ বছর জেল খেটে বের হয়ে জানলেন বেঁচে নেই পরিবারের কেউ

  16-04-2024 02:37AM




পিএনএস ডেস্ক: দীর্ঘ ২৪ বছর কারাভোগের পর জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন রেখা খাতুন। এতদিন পর মুক্ত হয়ে তার চোখে মুখে মুক্তির আনন্দের জায়গায় ভর করেছে বিষাদের ছায়া। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি হারিয়েছেন বাবা-মাসহ পরিবারের ২৫ সদস্যকে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই তার।

জানা গেছে, শিশু ধর্ষণ মামলায় রেখা খাতুন ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে ছিলেন। ওই মামলায় তাকে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অপরাধে আসামি করা হয়েছিল। মামলায় আরও দুজন আসামি ছিল। ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় রেখা খাতুনসহ অন্য আসামিদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। প্রত্যেকের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। রেয়াতের ৬ বছর ১ মাস ১ দিন অনুযায়ী রেখা খাতুনের কারাভোগের মেয়াদ শেষ হয় গত বছর ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু তিনি জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তিন বছরের জন্য কারা ভোগ করছিলেন।

তবে রেখা খাতুনের দাবি, শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তার স্বামীর বড় ভাইয়ের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে এই মামলায় আসামি করা হয়। এই মামলার অপর দুই আসামিকেও সে চিনতেন না। পরে জানতে পারেন তার স্বামীর সঙ্গে তাদের পরিচয় ছিল। তিনি ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর কারাগারে প্রবেশ করে আর কারাগার থেকে বের হন ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল। জরিমানার টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা না হলে আরও ৩ বছর কারাভোগ করতে হতো তাকে।

রেখা খাতুন বলেন, তার জন্য কেউ কোনোদিন আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেননি। তার পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে কথা বলেননি। তিনি কারাগারে যাওয়ার তিন বছর পর তার স্বামী কোরবান আলী আরেকজনকে বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তিনি কোথায় আছেন তাও তিনি জানেন না। আমার বাবা-মা ও স্বজনরা মারা গেলেও আমাকে জানানো হয়নি। নদীভাঙনে আমাদের কোনো জমিই আর অবশিষ্ট নেই।

জানা যায়, ১৪ বছর বয়সে রেখা খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয় ৩৪ বছর বয়সী কোরবান আলীর। দারিদ্র্যের কারণে রেখা খাতুনের বাবা-মা এ বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন। স্বামীর বয়স বেশি হওয়ায় রেখা ২-৩ বছর স্বামীর বাড়িতে যায়নি। ১৯৯৮ সাল থেকে স্বামীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। রেখা ও তার স্বামী কোরবান আলী লালমনিরহাট শহরের খোঁচাবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তার স্বামী পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন।

পরে ধর্ষণে সহযোগিতার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন রেখা। এ সময় তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করেন আদালত। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় যাবজ্জীবন কারাভোগকালীন গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে আরও তিন বছরের জন্য কারাভোগ শুরু হয় রেখার।

তবে বেসরকারি কারা পরিদর্শক টিমের সদস্য কবি ও সমাজসেবী ফেরদৌসী বেগম বিউটির সহযোগিতায় জরিমানার এক লাখ পরিশোধ করা হলে ৯ এপ্রিল ছাড়া পান রেখা খাতুন।

রেখার ছোট বোন টুম্পা বেগম জানান, সামর্থ্য না থাকায় রেখা আপার জামিন করাতে পারিনি। বাবা-মা, ভাইবোনসহ আপনজনদের মৃত্যুর খবরও তাকে দেওয়া হয়নি।

কবি ও সমাজকর্মী ফেরদৌসী বেগম বিউটি জানান, আমি রেখা খাতুনের জীবনগল্প শুনে তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেছি। তাকে কীভাবে পুনর্বাসন করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করছি।

লালমনিরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার ওমর ফারুক জানান, কারাগারে রেখা খাতুনকে হস্তশিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি হস্তশিল্পের কাজ করে উপার্জন করতে পারবেন। রেখা লালমনিরহাট কারাগারে ২৩ বছর ৪ মাস ৫ দিন ছিলেন। জরিমানার টাকা পরিশোধ করায় ৯ এপ্রিল তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

লালমনিরহাট-৩ (লালমনিরহাট সদর) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান জানান, রেখা খাতুনের বিষয়ে বিস্তারিত শুনেছি। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে তার পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন