বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক নারী অ্যাপ ডেভেলপার তিনি

  26-02-2018 01:03PM

পিএনএস ডেস্ক:বয়স মানে না কোনো বাধা। সেটা আরও একবার প্রমাণ করলেন ৮২ বছরের মাসাকো ওয়াকামিয়া। জাপানিজ এই নারী এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রোগ্রাম কোডার ও অ্যাপ ডেভেলপার। ৬০ বছর বয়সে কম্পিউটার চালাতে শেখেন তিনি। কিন্তু এরইমধ্যে হাত পাকিয়েছেন কোডিং আর অ্যাপ ডেভেলপিংয়ে।

আঠারো বছর বয়সে হাইস্কুলের পাঠ চুকিয়ে একটি ব্যাংকে ক্লার্ক হিসেবে কাজ শুরু করেন মাসাকো। ৪২ বছরের চাকরিজীবন শেষে অনলাইনে বন্ধু বানানোর জন্য তিনি একটি কম্পিউটার কেনেন। তবে কম্পিউটার ঠিকঠাক মতো ব্যবহার করতেই লেগে যায় তিন মাস। মাসাকো বলেন, অবসর নিয়ে আমি নিজেকে আরও বেশি সময় দিতে পারবো এই ভেবে আসলে খুশিই হয়েছিলাম।

মাসাকো তারপর ‘মেলো ক্লাব’ নামে বয়স্কদের জন্য একটি অনলাইন ক্লাবের সদস্য হন। তখনই ইন্টারনেটের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয় তার। প্রথম মাইক্রোসফট এক্সেলে হাত পাকান। এতটাই দক্ষতা অর্জন করেন যে পরে অন্য বয়স্কদেরও কম্পিউটার বিষয়ে শেখাতে শুরু করেন মাসাকো।

কম্পিউটার কেনাও হলো আবার শেখাও হলো কিন্তু যত মজার অ্যাপ আছে সেগুলোর সবই তরুণ কথা ভেবে বানানো। তাই এ সমস্যা নিয়ে তিনি পরিচিত সফটওয়ার ডেভেলপারদের বয়স্কদের জন্য আরও বেশি গেমিং অ্যাপ বানানোর কথা বলতেন। কিন্তু তার কথায় কেউ সাড়া দিতেন না। উপরন্তু বলতো, নিজেরটা নিজেই বানাও।

তরুণ ডেভেলপারদের এই কথাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন মাসাকো। কিনে ফেললেন প্রোগ্রামিংয়ের ওপর লেখা বই। শুধু তাই নয় ফেসবুক মেসেঞ্জার ও স্কাইপ ব্যবহার করে ৩শ’ কিলোমিটার দূরে থাকা একজন প্রোগ্রামারের কাছ থেকে শিখলেন কোডিং ও প্রোগ্রামিং।

প্রোগ্রামিং শেখার পর বয়স্কদের জন্য একটি অ্যাপ বানানোর কাজে হাত দিলেন মাসাকো। বানালেন হিনাদান নামক একটি অ্যাপ। গত বছরই অবমুক্ত করা হয় অ্যাপটি। এরইমধ্যে ১০ লাখ ব্যবহারকারী এটি দেখেছে। আর ৫৩ হাজার ব্যবহারকারী এটি ডাউনলোড করেছে।

মাসাকো বলেন, আমার এই শিশুতোষ অ্যাপটি এত বেশি সাড়া পাবে ভাবতে পারিনি। হিনাদান অ্যাপটির জনপ্রিয়তার কারণে এখন এটির ইংরেজি সংস্করণ তৈরি করা হচ্ছে।

হিনাদান অ্যাপটি জাপানে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী পুতুল দিবসে আয়োজিত একটি খেলা ‘হিনামাতসুরি’ অবলম্বনে বানানো হয়েছে। এই খেলায় ব্যবহারকারীরা নিজেদের স্মরণশক্তি কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো পুতুলকে সাজান।

এদিকে মাসাকোর এই অ্যাপ বানানোর ঘটনাটি সারা বিশ্বে এতটাই সাড়া পড়ে যে জাতিসংঘে বয়স্কদের জন্য ডিজিটাল টেকনোলজির ব্যবহার সম্পর্কে বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পান তিনি। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্যও রাখেন।

এছাড়া গেলো বছর অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার কনফারেন্সে অ্যাপল সিইও টিম কুক তার বক্তব্যে মাসাকোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

মাসাকো বলেন, এরকম অনেক মানুষই আছেন যারা বয়স কীভাবে কমাবেন এর জন্য ওষুধের পেছনে ছুটে থাকেন। কিন্তু এটা আসলে সম্ভব নয়। এটা করার চেয়ে আমি বরং বিভিন্ন জিনিস আবিষ্কার-উদ্ভাবনের পেছনে ছুটতে আগ্রহী। কারণ আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি নিজেকে বাহ্যিকভাবে পরিবর্তন না করে ভেতর থেকে পরিবর্তন করা উচিত।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন