তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধ

  30-01-2025 10:51PM

পিএনএস ডেস্ক: সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে তাদের অবরোধ শুরু হয়। রাত ১০টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলছে।

সেই হিসাবে টানা ১০ ঘণ্টা তাদের অবরোধে গুলশান-মহাখালী সড়কে যান চলাচল বন্ধ। ফলে ব্যস্ততম এ সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রয়েছে গণপরিবহন।

এদিকে, রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শিপ্রা রানী মণ্ডলসহ কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা কথা বলেন। তারপরও শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি স্থগিতে রাজি হননি। তারা তিতুমীর কলেজকে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়’ করার তাৎক্ষণিক ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেন। এ ঘোষণা না দিলে তারা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না। গণঅনশন, রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

তবে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষণা করা সম্ভব নয় বলে যুগ্মসচিব শিক্ষার্থীদের জানালে তারা বলেন, তাহলে যিনি ঘোষণা করতে পারবেন, তাকে ডেকে আনতে হবে।

দীর্ঘসময় বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে যুগ্মসচিব নুরুজ্জামান বলেন, ‘তোমাদের দাবি যে অযৌক্তিক, সেটা তো কেউ বলছেন না। কিন্তু এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। তোমরা ২৮ বছর ধরে আন্দোলন করছো। এটা তোমরা আদায় করেই ঘরে ফিরবা, সেটাও আমরা জানি। কিন্তু এখনই বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়াটা তো সম্ভব নয়। পরবর্তীতে যত জায়গায় এটা নিয়ে কাজ হবে, আমি সেখানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তোমরা আজকে রাতে ফিরে যাও।’

যুগ্মসচিবের এমন বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা তা মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘হয় তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়, না হয় মৃত্যু’। এ ঘোষণা দিয়ে রাতেও তারা গণঅনশন, রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, যুগ্মসচিব স্যার মুলা নিয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে এসেছিলেন। এর আগেও তারা অনেকবার মুলা ঝুলিয়ে গেছেন। আর মুলা ঝুলানো প্রতিশ্রুতি আমরা মেনে নেবো না।

এর আগে ঘটনাস্থলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা তাদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেখানে অনশনরত শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন, জাবেদ, মোহাম্মদ আলীসহ বেশ কয়েকজন বারবার তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দাবি তুলেন।

অনশন গড়ালো ২৯ ঘণ্টায়, অসুস্থ ৬ শিক্ষার্থী
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল ৫টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শুরুতে পাঁচজন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাতে যোগ দেন আরও দুজন। আর দুপুরে তা গণঅনশন কর্মসূচিতে পরিণত হয়।

সেই অনুযায়ী- টানা ২৯ ঘণ্টা অনশন চলছে। এতে এখন পর্যন্ত ছয়জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনের নাম-পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন—কলেজের বাংলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের রানা আহমেদ, একই শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের আমিনুল ইসলাম ও মার্কেটিং বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।

‘তিতুমীর ঐক্য’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মূলত ৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের দাবিগুলো হলো—তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠন করে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ বা অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন ও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আইন ও সাংবাদিকতা বিষয় চালু করতে হবে।

এছাড়া অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসনসংখ্যা সীমিতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণের লক্ষ্যে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিতকরণ।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন