পিএনএস ডেস্ক: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগকৃত রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারসহ সব কর্মকর্তাদের অপসারণ করে মেধাবী ও প্রবাসীবান্ধব কর্মকর্তাদের নিয়োগসহ ১০ দাবি জানিয়েছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসীদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনায় তারা এসব দাবি জানান। আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রবাসী অধিকার পরিষদ।সভায় বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক নুর।
আলোচনা সভায় সৌদি প্রবাসী শামসুদ্দীন বলেন, ‘আমি ২০ বছর সৌদিতে কাটিয়েছি। লিবিয়াসহ মোট ৩৩ বছর প্রবাসে কাজ করেছি। জীবনে অসংখ্যবার এয়ারপোর্টে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমরা ১ কোটি ৩৫ লাখ প্রবাসী এখন এক হয়েছি৷ আমরা পাসপোর্ট অফিসে গেলে ঘুস, দালাল ধরা ছাড়া কোনো পাসপোর্ট হয় না। এখন স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। আমরা চাই, আমাদের ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন হোক।’
গণঅধিকারের নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দীন আজাদ বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকার পতনের আন্দোলনে বিদেশে যেসব দেশপ্রেমী প্রবাসী আন্দোলন করেছিল, তারা আজ জেলখানায় বন্দি। আমরা চাই, তাদেরকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হোক। তাদের পরিবার দেশে অসহায় হয়ে আছেন।’
২৭ বছর মালয়েশিয়া থেকেছেন মুখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের এক সহকর্মী মারা গেছে দেশে আনার খরচ নেই। আমাদের হাইকমিশনে দশবার গিয়েছি কিন্তু সহায়তা করেনি। এক মালয়েশিয়ান লোক কবরের জায়গা দিতে রাজি হয়েছে, তবুও হাইকমিশন সাহায্য করেনি। শুধু মালয়েশিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশে হাইকমিশন প্রবাসীদের কোনো সাহায্য করেনি। তাদের কাছে হয়রানি ছাড়া কোনো উপকার প্রবাসীরা পায়নি।’
বক্তারা বলেন, ‘প্রবাসীরা যখন দেশে আসে, তখন এয়ারপোর্টে তাদের কোন শ্রেণিতে ফেলে এভাবে হয়রানি করে আমরা জানি না। মানুষের ব্যাগ কেটে টাকা রেখে দেওয়া, মোবাইল রেখে দেওয়া, লুটতরাজ অনবরত চলছে। অথচ প্রবাসীরা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল রাখছে। প্রবাসীরা দেশে আওয়ামী লীগের মিথ্যা মামলার কারণে পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারে না, তারা প্রবাসে যেতে পারে না। প্রবাসীকল্যাণ থেকে ব্যাংক ঋণ পেতে নানান দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিতে হবে। বিনা খরচে লাশ আনার ব্যবস্থা করতে হবে। পাসপোর্ট অফিসে দালালমুক্ত করতে হবে।’
তাদের ১০ দফা দাবিগুলো হলো- অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ এবং অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ পরিবহণ ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২২ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার দিতে হবে।
বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ ও যথাযথ সম্মান দিতে হবে। প্রবাসীদের জন্য যুগপোযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ও পেনশন সুবিধা দিতে হবে। সহজ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালাল ও হয়রানিমুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা দিতে হবে। প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। বিদেশে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণ ও আটকদের মুক্তির জন্য সরকারের সহযোগিতা দিতে হবে। বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাংলাদেশি দূতাবাস ও শ্রমকল্যাণ উইং দিতে হবে।
এছাড়া অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান ও সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তারা।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
হাসিনা সরকারের নিয়োগকৃত সব রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারদের অপসারণের দাবি
20-08-2024 07:51PM