বরফঢাকা অ্যান্টার্কটিকায় হঠাৎ ফুল ফোটায় শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা

  26-09-2023 06:31PM

পিএনএস ডেস্ক: বরফের মহাদেশ খ্যাত অ্যান্টার্কটিকার বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে কচি পাতা, ফুল। যদিও ফুল ফোটার মধ্যে খারাপের কিছু নেই। তবে মহাদেশটিতে এমন ঘটনায় শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা।

তীব্র শীতল অঞ্চলটিতে এর আগে এত দ্রুত কখনও কোনও উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়নি। অ্যান্টার্কটিকার বুকে ফুল ফোটা আদতে জলবায়ুর পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দেয়। তা না হলে বরফে ঢাকা মহাদেশটিতে ফুল ফোটা এক প্রকার অসম্ভব।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সিগনি দ্বীপে দুই ধরনের উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা গেছে। তাতে ফুল ফুটেছে। ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যে হারে এই উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তার ১০ গুণ উদ্ভিদ জন্মেছে।

অ্যান্টার্কটিকায় অন্য ধরনের উদ্ভিদের জন্মের হারও বেড়েছে। রিপোর্ট বলছে, আগের তুলনায় এখন ওই অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদ বেড়েছে পাঁচ গুণ।

সারা বছর হিমাঙ্কের অনেক নিচে তাপমাত্রা থাকে অ্যান্টার্কটিকায়। সে কারণে মস, লিচেন জাতীয় শৈবাল ছাড়া তেমন কোনো উদ্ভিদ জন্মায় না সেখানে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে সেখানে নতুন ধরনের উদ্ভিদের জন্ম হচ্ছে। এর ফলে কোপ পড়তে পারে সেখানকার আদি বাসিন্দা মস, লিচেনের বৃদ্ধিতে। এর ফলে অ্যান্টার্কটিকার বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, নতুন এই উদ্ভিদের বৃদ্ধির কারণে চিরতরে সেখান থেকে অবলুপ্ত হতে পারে সেখানের স্থাণীয় উদ্ভিদগুলো।

তারা বলছেন, এমনকি মাটির চরিত্রও বদলে যেতে পারে বলে মত গবেষকদের। এই ধরনের উদ্ভিদ পচে মাটির সঙ্গে মিশলে মাটির অম্লত্বের পরিমাণ বদলে যেতে পারে। তাতে নতুন ধরনের ব্যাকটিরিয়া জন্মাতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে পরিবেশে, বাস্তুতন্ত্রে।

অ্যান্টার্কটিকার বুকে এই ফুল প্রথম লক্ষ্য করেন অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তারা দেখেন, অ্যান্টার্কটিকায় মূলত দু’ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি হারে। প্রথম দিকে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে দেখা যেত এই উদ্ভিদ। এখন তার বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এই উদ্ভিদ।

গত ২০ বছর ধরে অ্যান্টার্কটিকায় খুব ধীরে ধীরে এই উদ্ভিদের প্রসার লক্ষ্য করছেন বিজ্ঞানীরা। আগে ঠান্ডার কারণে এই উদ্ভিদ খুব বেশি দিন বাঁচত না। সম্প্রতি তার আয়ুষ্কাল বেড়েছে। ফুলও ফুটছে।

এই পরিবর্তনের কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়নের পাশাপাশি মানুষকেও দায়ী করেন। তাদের মতে, অ্যান্টার্কটিকায় গবেষকদের সঙ্গে অভিযাত্রীদের আনাগোনাও বেড়েছে। তাদের পায়ে পায়েই এই উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে পড়েছে বহু দূর। সে কারণে এর বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। এই উদ্ভিদের বীজ সম্ভবত বহু বছর আগে গবেষক এবং অভিযানকারীদের সঙ্গেই অ্যান্টার্কটিকায় এসেছিল। অতীতে তীব্র ঠান্ডার কারণে তা উদ্ভিদে পরিণত হতে পারেনি।

গবেষকদের মতে, সিল মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটেছে। সিল মাছ শৈবাল-সহ বিভিন্ন উদ্ভিদের উপর দিয়ে মাড়িয়ে চলত। সে কারণে সেগুলো মরে যেত। এখন সিল মাছের সংখ্যাও কমেছে। যার অন্যতম কারণ খাদ্যাভাব। সে কারণে বেড়েছে উদ্ভিদের সংখ্যা, যাতে বিপদ দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন