বিবিসি-সিএনএন কভারেজে ‘ইসরায়েলপন্থী পক্ষপাতিত্ব’

  06-10-2024 12:13PM


পিএনএস ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট ও সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে বিশ্বের দুটি প্রধান সংবাদ সংস্থা সিএনএন ও বিবিসির বিরুদ্ধে।

শনিবার (৫ অক্টোবর) কাতারের সংবাদ সংস্থা আল-জাজিরায় এক প্রতিবেদনে জানায়, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলার সংবাদ প্রকাশ করে আসা সংস্থা দুটির এমন দশজন সাংবাদিক এমন অভিযোগ করেছেন।

এই সাংবাদিকরা তাদের নিউজরুমের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম প্রকাশ করেছেন, যেখানে তারা সংবাদ প্রকাশে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাত ও সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরেছেন।

এই সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন নিউজরুম ব্যক্তিরা ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনেননি এবং প্রতিবেদনে হস্তক্ষেপ করে ইসরায়েলি নৃশংসতাগুলো উপেক্ষা করেছেন। এমনকি সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে ইসরায়েলের পক্ষে অসত্য প্রচারণাও চালানো হয়।

আল-জাজিরার এই প্রতিবেদনটিতে গাজায় চরম বিপর্যয়ের পেছনে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর ভূমিকা তুলে ধরেছেন ওই সাংবাদিকরা। সিএনএন ও বিবিসি উভয়কেই ইসরায়েলপন্থি পক্ষপাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যারা ফিলিস্তিনিদের মানবিক দিককে উপেক্ষা করে এবং তাদের কষ্টকে কম গুরুত্ব দিয়েছে।

সিএনএনের এক সাংবাদিক অ্যাডাম বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবরের আগে তিনি মন থেকে সাংবাদিকতার নীতিগুলো অনুশীলনের প্রতি বিশ্বাস রাখতেন। কিন্তু এরপর যেভাবে ইসরায়েলি বর্ণনার সমর্থনে সংবাদ প্রকাশ হতে দেখেন, তা তাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়। কারণ এগুলো সত্য ছিল না। এসব ঘটনা সিএনএন ও বিবিসির মতো বড় সংবাদ সংস্থাগুলো থেকে প্রকাশিত ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের খবরের নির্ভুলতা এবং সত্যতার ওপর সন্দেহ তৈরি করেছে।

সিএনএনের কূটনৈতিক সম্পাদক নিক রবার্টসনের গাজার আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতাল থেকে করা একটি প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্রের ভুল দাবি তুলে ধরা হয়। এমনকি আরবি ভাষাভাষীরা ভুলটা দেখিয়ে দিলেও তা উপেক্ষা করা হয় এবং সেভাবেই সম্প্রচার করা হয়, যা সিএনএনের জন্য বিব্রতকর হয়ে ওঠে। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিল সরকারি সূত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, যা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করে। অন্যদিকে, বিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ফিলিস্তিনপন্থি অতিথিদের কঠোরভাবে যাচাই করা হলেও ইসরায়েলি অতিথিদের ক্ষেত্রে তারা এমনটা করেনি।

এই ঘটনাগুলো সেই সঙ্গে সম্পাদকীয় বাধ্যবাধকতা দেখাচ্ছে যে, বড় সংবাদ মাধ্যমগুলো কীভাবে সংবেদনশীল ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো দেখে এবং তারা কতটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। তবে সিএনএন ও বিবিসি এসব পক্ষপাত ও নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গাজার সংকট নিয়ে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের কাজকর্ম অনেক আগে থেকেই বিতর্কিত। সংবাদ মাধ্যমগুলো পক্ষপাতিত্ব এবং সংঘাতের বাস্তবতা উপস্থাপন করতে তাদের ব্যর্থতা বারবারই সমালোচিত হয়েছে। গাজার ওপর বিমান হামলা, মানবিক সংকট এবং অগণিত মানুষের মৃত্যুর ঘটনা হয়তো প্রতিবেদনে উঠে আসে, কিন্তু কীভাবে এবং কোন প্রেক্ষাপটে তা তুলে ধরা হচ্ছে, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। পশ্চিমা মিডিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তাদের একপেশে প্রতিবেদন ও ইসরায়েলপন্থি বর্ণনা। ফিলিস্তিনি জনগণের কষ্ট, মৃত্যু এবং ধ্বংসযজ্ঞ অনেক সময় গুরুত্ব পায় না বা পর্যাপ্ত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয় না।

পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্য বেশি গুরুত্ব পায় এবং তাদের বক্তব্য অনেক সময় প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে ফিলিস্তিনপন্থিদের বক্তব্য খুব কমই গুরুত্ব পায়।


পিএনএস /আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন