বাগদাদে শিল্পীদের রংয়ের ছোঁয়া অনুপ্রেরণার উৎস

  27-10-2024 10:33PM

পিএনএস ডেস্ক: দীর্ঘ যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পরেও ইরাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এখনো দূর অস্ত। হাত গুটিয়ে বসে না থেকে রাজধানী বাগদাদের এক শিল্পী পাড়ায় পাড়ায় রংয়ের ছোঁয়া আনছেন। সেই উদ্যোগ মানুষকে বিশাল প্রেরণা জোগাচ্ছে।

বাগদাদের আল ফাদল এলাকায় যে কোনো পরিবর্তন চলছে, শুধু রং-ভরা বড় বালতি দেখেই তা টের পাওয়া যাচ্ছে। আলি খলিফা ও তাঁর বাটারফ্লাই এফেক্ট নামের শিল্পীসংঘের দৌলতে মলিন এই দেওয়ালগুলি রংচংয়ে হয়ে উঠছে। রঙিন মিউরালসের মাধ্যমে বাগদাদের অবহেলিত পাড়াগুলিতে প্রাণ সঞ্চার করাই তাঁদের মিশন।

আলি বলেন, আমাদের কাজের প্রশংসাই আমাকে প্রেরণা জোগায়। সৌভাগ্যবশত এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাইনি। এখানকার বয়স্ক ও তরুণদের জন্য এটা নতুন এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু তারা আমাদের কাজ পছন্দ করছে বলেই মনে হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, একটু রংয়ের ছোঁয়া কি পৃথিবীকে আরো ভালো জায়গা করে তুলতে পারে? আলির মতে, মানুষের উপর শিল্পকলার প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। তিনি ও তাঁর সতীর্থরা নিশ্চিত যে মানুষ যখন তাঁদের দেওয়ালে রং করতে বলেন, তখন সেটা আর শুধু উপরিভাগের সৌন্দর্যের বিষয় থাকে না।

আলি খলিফা বলেন, এই দেওয়ালের প্রতিটি গর্ত, প্রতিটি চিড়ের পেছনে মর্মান্তিক কোনো স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু বুলেটের গর্তগুলিকে ফুলে পরিণত করে এক বার্তা পাঠানো হচ্ছে। খারাপ সময় পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগোনো সম্ভব।

এরই মধ্যে এমন আরো ম্যুরাল গোটা বাগদাদ শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আলির রঙিন জগত সবার নাগালে চলে আসছে। মলিন শহরটি যে অনেক প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। শিল্পকলা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। যারা সেই শিল্প সৃষ্টি করছেন, শুধু তারাই নয় শিল্পসৃষ্টির আশেপাশের মানুষও প্রেরণা পেতে পারেন। এই শিল্পসংঘ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইরাকের রক্ষণশীল সমাজে প্রায় অদৃশ্য নারীরাও এভাবে নিজেদের আইডিয়া তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন।

কাছের এক পার্কে আলি খলিফা আঁকা শেখাচ্ছেন। তিনি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চান। তাঁর বিশ্বাস, একটি পেন্সিল বা তুলির আঁচড় ঠিক প্রজাপতির পাখনার সঞ্চালনের মতো জগতে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করতে পারে।

আলি খলিফা নিজের গোষ্ঠীর নামকরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, বাটারফ্লাই এফেক্ট এক বৈজ্ঞানিক পরিভাষা, এক তত্ত্ব। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি কাজ তা সে যতই ছোট ও সরল হোক না কেন, সময়ের সমাপ্তি পর্যন্ত প্রভাব রাখে। ভালো কাজ করলে কিছু একটা বেড়ে উঠতে পারে। প্রভাব স্থায়ী হয়। সে কারণে আমরা এই নাম বেছে নিয়েছি।

আল ফাদাল এলাকায় আলি ও তাঁর টিম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের মিউরালের কাজ শেষ করেছেন। বাগদাদ শহরে আরো একটি পেইন্টিং যোগ হলো। কিন্তু শহরটিকে আরো রঙিন করে তোলার মিশন চলতেই থাকবে। এখনো যে অনেক কাজ বাকি রয়েছে।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন