পিএনএস ডেস্ক: চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের ফাঁদে ফেলে ও ভুয়া বিয়ের নাটক সাজিয়ে পাচারের অভিযোগে একটি মানব পাচারকারী চক্রের দুই চীনা নাগরিককে গ্রেফতার করেছে এপিবিএন। তারা হলেন- ফ্যান গোউয়ে, ইয়াং জিকু। সোমবার পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার এপিবিএন জানায়, চাঁদপুর জেলার সুবর্ণা আক্তার নামে এক ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে এপিবিএনের নজরে আসে। সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারকালে তিনি পালিয়ে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে চলে আসেন এবং জানান- ফ্যান গোউয়ে তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছে। সে বর্তমানে চীন যাওয়ার উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টে অবস্থান করছে।
অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে বোর্ডিং লাউঞ্জ-৫ থেকে অভিযুক্ত চীনা নাগরিককে শনাক্ত এবং আটক করে এপিবিএন। পরে ইমিগ্রেশন থেকে অফলোড করে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসা হয়। অভিযুক্তের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ও ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নিকুঞ্জের একটি তিনতলা বাড়িতে আরো দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগী অবস্থান করছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সোমবার গভীর রাতে সিআইডির টিএইচবি সেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও এয়ারপোর্ট এপিবিএনের একটি চৌকস দল নিকুঞ্জের সেই বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে তারা ইয়াং জিকু নামে আরেকজন চীনা পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়।
এ সময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, গত ২ বছর আগে টিপু এবং জিহাদ নামে দুইজনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা হতো। কথা বার্তার এক পর্যায়ে জিহাদ তাকে চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি হলে টিপু এবং জিহাদ গত অক্টোবরের ২৬ তারিখ ভিক্টিমের নিজ বাড়ি থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। টিপু এবং জিহাদ ভিক্টিমকে ঢাকায় খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-১, রোড-৯/বি এর ৮নং বাড়িতে নূরু নামে এক ব্যক্তির কাছে নিয়ে আসে। অতঃপর নূরু নামে ঐ ব্যক্তি ইয়াং হও নামে একজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে ভিক্টিমের বিয়ের নাটক সাজায়।
অক্টোবরের ২৬ তারিখেই ইয়াং হওর সঙ্গে ভুয়া বিয়ে সম্পন্ন হয়। ভুয়া বিবাহের পর তারা উল্লেখিত নিকুঞ্জের বাড়িতে বসবাস শুরু করে। ঐ বাড়িতে আরো ৭-৮ জন চীনা ব্যক্তি ও আরো নারীকে দেখেছেন বলে ভুক্তভোগী জানান। এর মধ্যে পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীর পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে এবং ভুক্তভোগীকে নিকুঞ্জের বাসায় আটকে রাখে।
ভুক্তভোগীকে এই সময়ে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। গত সপ্তাহে ভুক্তভোগীর কথিত স্বামী ‘ইয়াং হও’ চীনে চলে যায়। পরে পাচারকারী চক্রের সদস্য ফ্যান গোউয়ে একটি ফ্লাইটে পাচার করার জন্য সোমবার ভুক্তভোগীকে জোর করে বাসা থেকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। বিমানবন্দরে এনে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সেটিংসের ভাষা চাইনিজ ভাষায় রূপান্তর করে ফেরত দেয়। বিমানবন্দরে সুযোগ বুঝে পালিয়ে উক্ত নারী এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে সাহায্য চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
মঙ্গলবার ভুক্তভোগী নিজে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছেন।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার এডিশনাল ডিআইজি শিহাব কায়সার খান বলেন, বেশকিছু দেশের মানব পাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করার চেষ্টা করে। তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি।
মানবপাচার পুরোপুরি ঠেকাতে সবার সতর্ক থাকার বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
বিয়ের নাটক সাজিয়ে চীনে পাচার, গ্রেফতার ২
25-12-2024 01:28AM