হাসিনার বিদ্বেষের আগুনে পুড়লো ৩২’র বাড়িসহ সারাদেশে মুজিবের ম্যুরাল

  06-02-2025 03:00AM

পিএনএস ডেস্ক: ভার্চুয়াল বক্তব্য দিয়ে আবারও ক্ষোভের আগুন ছড়ালেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা। সেই ক্ষোভের আগুনে ঢাকায় পুড়ল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি, ভাঙচুর হলো খুলনার প্রভাবশালী ‘শেখ বাড়ি’। এছাড়া কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও দলটির সংশ্লিষ্ট কিছু স্থাপনায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

রাজনৈতিক মহল বলছে, শত শত ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ এখনো যেন ঢাকার রাজপথে ছড়িয়ে আছে। ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখতে গত জুলাই-আগস্টে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগ করেছিলেন শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে টিকতে পারেননি। ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান।

কিন্তু প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের মধ্যে আকস্মিক ছেদ যেন মানতেই পারছেন না তিনি। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই কেবল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে নানা বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার হচ্ছে তার। যদিও শুরুর দিকে এসব বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তবে সম্প্রতি তার বক্তব্য অডিও আকারে আওয়ামী লীগের পেজে ছড়ানো হচ্ছে।

ভারতে আশ্রিত হাসিনার এ ধরনের বক্তব্যে উসকানি-বিদ্বেষ থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার দিল্লির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। তা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতি।

উপরন্তু তার এসব বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে শত শত ছাত্র-জনতার প্রাণহানির ঘটনায় বিন্দুমাত্র অনুশোচনাবোধ নেই। তার সরকারের নির্দেশে তৎকালীন পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে মারার শত শত ফুটেজ অনলাইনে প্রকাশ পেলেও হাসিনা এসব বক্তব্য-বিবৃতিতে দম্ভ ও তাচ্ছিল্যভরে আন্দোলনকারীদেরই দুষছেন।

অনুশোচনার বদলে তার এ ধরনের দম্ভ ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলছিল ছাত্র-জনতাকে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে আগে থেকে প্রচারণা চালিয়ে তিনি যেন সেই ক্ষোভের আগুন উসকে দিলেন।

এই ভাষণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। তাদের অভিযোগ, ভারতে বসে ভাষণ দিয়ে শেখ হাসিনা বিদ্বেষের আগুন ছড়াচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে মার্চ করার ঘোষণা দেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতেই থাকতেন শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান। বাড়িটি পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হতো ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে। এমনকি হাসিনার অনুগত অনেক সরকারি আমলাও এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের কার্যক্রম শুরু করতেন।

এই বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই সমবেত হতে থাকে ছাত্র-জনতা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, রাত ৯টায় শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের সময় নির্ধারিত ছিল। যদিও হাসিনার অডিও ভাষণ প্রচার হয়। তার এ ভাষণকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়।

হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি। ’

সন্ধ্যায় আরেক পোস্টে বলেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে। ’ রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসনাত আরেকটি পোস্টে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের চিহ্ন বিলোপের সাথে সাথে খুনি হাসিনাসহ গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণহত্যা, গুমসহ নানা অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশের আদালতে মামলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তার এমন বক্তব্য প্রচার দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করলো। আন্দোলনকারীদের মধ্যে আরও উসকে দেওয়া হলো আওয়ামী লীগবিরোধী ক্ষোভ।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন