পিএনএস ডেস্ক: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে গাছের গুঁড়ি ফলে ১০টি যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল লুট করে নিয়ে যায় চালকদের সর্বস্ব। শুধু লুট করেই ক্ষান্ত হয়নি। চালকদের করা হয় মারধর। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের ফকিরচালা এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। পরে এলাকাবাসি ও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। যানবাহনের মধ্যে ছিল ট্রাক, সিএনজি ও মোটরসাইকেল।
সরেজমিনে জানা যায়, সড়কে পড়ে আছে গাড়ি ভাঙচুরের কাচের টুকরো। পাশেই আস্ত গাছের গুঁড়ি। এই গাছ ফেলেই অবরোধ করা হয় সড়ক। পরে চালকদের মারধর করে মোবাইল ফোনসহ নগদ টাকা লুট করে নেয় ডাকাতরা।
১০ চাকার বড় ট্রাক নিয়ে ডাকাতির কবলে পড়েন চালক মিন্টু মিয়া (৩৫)। তিনি জানান, অনেকগুলো গাড়ির সারি দেখে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে জানতে চান এখানে কি হয়েছে। এরই মধ্যে ডাকাত দলের একজন এসে তাকে বলে, এখানে কি হচ্ছে তুই বুঝছ না? যা আছে বের কর। না দিতে চাইলে রামদায়ের উল্টো পিঠ দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করা হয়। পরে তার কাছে থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা এবং ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্মার্টফোন নিয়ে যায়।
মিন্টু আরও জানান, ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর তিনি গাড়ি থেকে নেমে অন্যান্য চালকদের থেকে জানতে পারেন ডাকাতির কবলে পড়েছিল ১০টি গাড়ি, সিএনজি ও মোটরসাইকেল। কাঁচামালের যে ট্রাকটি কবলে পড়েছিল সেই এক ট্রাক চালকের কাছ থেকেই লুট করা হয় ৬০ হাজার টাকা।
কথা হয় ডাকাতির কবলে পড়া তিনটি ড্রাম ট্রাকের মালিক বাদল ফকিরের সঙ্গে। তিনি জানান, রাতে তার গাড়ির চালক একজনকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পান। এরপর অপরজনকে ফোন দিলে সে রিসিভ করেন না। কিছুক্ষণ পর মোন্নাফ মিয়া নামে অপর গাড়ির এক চালক ফোন করে তাকে জানায় ট্রাকগুলো ডাকাতের কবলে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘাটাইল থানায় ফোন করেন।
বাদল আরও জানান, চালকদের দেওয়া তথ্যমতে তিনটি স্মার্টফোন, একটি বাটনফোন এবং ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে ডাকাতরা। মারধরের শিকার হয়েছেন চালকরা। তিনি ঢাকায় থাকায় এই মুহূর্তে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে পারছেন না। ঘাটাইল ফিরে আইন অনুযায়ী যা করার করবেন বলে জানান।
ডাকাতদের কবলে পড়েছিলেন উপজেলার বাইচাইল গ্রামের শহিদুল ইসলাম টিক্কা। তিনি বলেন, আমার কাছে থাকা নগদ ৭ হাজার টাকা এবং একটি স্মার্টফোন দিয়ে গেছে।
এর আগে, নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে যে ৫ বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে এদের মধ্যে ভুক্তভোগী একজন বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম। ২৪ নভেম্বর উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের বেইলা গ্রামে তার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত আড়াইটার দিকে ১০/১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাড়ির গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রশি দিয়ে ঘরের সবার হাত-পা বেঁধে ফেলে। ডাকাতরা আলমারি ভেঙে লুট করে নিয়ে যায় ১৩ ভরি সোনার গহনা, রূপা প্রায় ৫০ ভরি, নগদ টাকা দেড় লাখ ও একটি স্মার্টফোন। নগদ টাকাসহ প্রায় ১৯ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতরা নিয়ে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীদের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাদের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম ২৮ নভেম্বর বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
মামলা নিয়ে কথা হয় রফিকুলের সঙ্গে। তার ভাষ্য, গত সপ্তাহে সাগরদীঘি তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর তদন্তের কাছে মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে বলে তাকে জানানো হয়।
তিনি আরও জানান, এ ধরনের কথা বারবার পুলিশ বলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আগামী সপ্তাহে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপারের কাছে যাবেন বলে তিনি জানান।
ডাকাতির বিষয়ে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং ভুক্তভোগীদের দেওয়া তথ্যমতে ডাকাতির ঘটনায় যারা ছিল তাদের বয়স খুবই কম। একটি বাটন মোবাইল, কয়েকটি স্মার্টফোন এবং কিছু টাকা নিয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
সন্ধ্যা নামলেই ঘাটাইলের সড়কে আতঙ্ক
17-02-2025 01:36AM
