ইন্টারনেট ছাড়া অন্যরকম জীবনযাপন

  24-07-2024 11:56PM

পিএনএস ডেস্ক : কোন আনন্দ বা দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য ফেসুবক কোন স্ট্যাটাস নেই। সুন্দর একটা ছবি ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিংবা অবসরে ওটিটিতে প্রিয় কোন সিনেমা দেখার সুযোগ নেই। বাসায় বসে প্রিয়জনের সঙ্গে বসে প্রিয় কোন খাবার অর্ডার দেওয়া সুযোগ হচ্ছে না। ইন্টারনেট ছাড়া এই নেই আর নেই মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে ঢাকাসহ পুরো দেশের মানুষের।

দেশজুড়ে চলমান কারফিউ ও সহিংসতার কারণে গত পাঁচ দিন ধরে মানুষ পুরোপুরি ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ইন্টারনেট ছাড়া মানুষ চলতে পারে এটা কিছু দিন আগে কেউ কল্পনাও করতে পারতো না। আমাদের নিত্য দিনের অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো ইন্টারনেট। অনেকে কাছে ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে ইন্টারনেট ছাড়াই চলতে হচ্ছে।

বর্তমান নাগরিক জীবনে যোগাযোগ, তথ্য-প্রাপ্তি, জরুরি সেবা সবকিছুই ইন্টারনেট নির্ভর। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ইন্টারনেট জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু ইন্টারনেট যুগের আগে মানুষ তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যে কোন বিষয় নিয়ে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিতো অনেকটা সময়। কেউ তখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢু মারতো না। অনেকেই আবার অবসর সময়ে প্রিয় লেখকের বউ পড়ে জ্ঞান অর্জন করতেন। ছুটির দিনগুলো পরিবারের সঙ্গে ক্যারম বোর্ড, লুডু খেলে সুন্দর সময় পার করতেন। কোন বিশেষ উপলক্ষে সবাই মিলে পছন্দের খাবার রান্না করতেন বাড়ির গৃহিণীরা।

কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন গেমস, বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সারাক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকে। ইন্টারনেটের এই মাধ্যমগুলোতে তারা এতটাই ব্যস্ত যে তাদের অবসর সময়ে পুরোটাই পরিবার কিংবা প্রিয়জনকে না দিয়ে ইন্টারনেটে মজে থাকেন।

কোটাবিরোধী আন্দোলন ও সহিংসতার কারণে গত কিছুদিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ। তাই কেউ চাইলেও ইন্টারনেট প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই পরিবারকে সময় দিতে হচ্ছে। ফিরে যেতে হচ্ছে ইন্টারনেটের আগের যুগে। ফলে পরিবারিকভাবে ভালো সময় কাটছে সবার। শিশু-কিশোররা মোবাইলফোন ছেড়ে পরিবারের বড়দের সঙ্গে গল্প ও খুনসুটিতে মেতে উঠেছে। সাধারণ ছুটি থাকার কারণে শিশু কিশোররা পরিবারের আপনজনকে কাছে পেয়ে ভালো সময় পার করেছ। যেন পরিবারের সকলের মধ্যে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে ইন্টারনেট ছাড়া এক অন্যরকম পারিবারিক জীবন কাটাচ্ছেন দেশের সব মানুষ।


সহিসংতা ও দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে সরকার কারফিউ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। কারফিউয়ের মধ্যে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করেছে সরকার। এর আগে করোনার সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলো দেশের মানুষ। কিন্তু তখন ইন্টারনেট থাকার কারণে প্রায় সবাই ইন্টারনেট বুঁদ হয়ে থাকতো। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। এবার ঘরে থাকলেও কেউই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। গৃহবন্দি মানুষের কাছে ইন্টারনেট না থাকায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় বেশ কিছু জরুরি সেবা ও দেশের বাইরে যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটছে নগরবাসীর। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা চাকরিজীবী সাবিনা ইয়াসমিন ও মিনহাজ ইসলাম দম্পতি বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান তারা। মিনহাজ ইসলাম জানান, এই ছুটি মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত আনন্দের। সাধারণ ছুটি থাকার কারণ অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই। আর ইন্টারনেট না থাকার কারণে স্ত্রী ও সন্তান কোয়ালিটি টাইম দিতে পারছি। পরিবারের মানুষের সঙ্গে একান্ত সময়গুলো উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছি।

খেলার মাঠ না থাকার কারণে ঢাকা শহরের বেশি ভাগ শিশু কিশোর মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মোবাইল ফোনের আসক্তির কারণে সন্তানরা এখন পরিবারের কারো দিকে ফিরেও তাকায় না। মিরপুরের বাসিন্দা ফারজানা ইসলাম জানান, ইন্টারনেট না থাকার কারণে এ কয়েকদিন বাচ্চারা একটু অস্থির হয়ে থাকলেও এ সময়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাদের এক ধরনের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবারের বড়দের সঙ্গে ছোটরা গল্প করছে। বিভিন্ন খেলাধুলার মেতে উঠেছে। ছোট বেলা গল্প করে সময় কাটাচ্ছে পরিবারের সবাই। লালবাগের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন বলেন, সারাদিন ক্লাস পরীক্ষা, বাবা-মায়ের চাকরি কারণে পুরোটা খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটতো। ইন্টারনেট না থাকা, সাধারণ ছুটি ও স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে পরিবারের সবার মধ্যে সুন্দর ও উপভোগ্য সময় কাটছে। সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর তামান্না রহমান বলেন, নানা কারণে আমাদের পারিবারিক বন্ধনগুলো হালকা হয়ে যাচ্ছে। এরফলে নগরের মানুষগুলোর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। সবাই সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় কাটাতো। আনন্দ ও দুঃখের কথা ফেসবুকে লিখতো। কিন্তু পাশের মানুষটির কাছে শেয়ার করতো না। মানুষগুলো একটা বিষণ্নতায় থাকতো। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকার কারণে মানুষ এখন পরিবারের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। এরফলে মানুষগুলো মানসিক ভাবে বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছেন।

এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন