সাগরে ভাসমান ছোট শহর

  14-10-2014 01:31AM

পিএনএসঃ বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ বা প্রমোদতরিকে বলা যেতে পারে সাগরে ভাসমান ছোট শহর বা ভাসমান একটি দ্বীপ। ছোট পরিকল্পিত সাজানো-গোছানো শহরে যে সুবিধা থাকে, তার প্রায় সবই পাবেন এ জাহাজে। আছে রেস্টুরেন্ট, খেলার মাঠ, বার, সুইমিং পুলসহ আধুনিক প্রায় সব সুবিধা।

এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ অ্যালিউর অব দ্য সিজ। এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজ ওয়েসিস অব দ্য সিজ থেকে মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা। রয়েল ক্যারাবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের মালিকানাধীন জাহাজ দুটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ জাহাজ।
ইতিহাসের বৃহত্তম জাহাজ দুটির নামকরণ থেকে প্রতিটি স্তরে রয়েছে চমকপ্রদ সব তথ্য। নির্মাণ শুরুর আগে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ‘নেম দ্যাট শিপ’ নামের এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৯১ হাজার নাম সংগৃহীত হয়। বিপুলসংখ্যক নাম থেকে বেছে অবশেষে মিশিগানের জর্জ ওয়েজারের পাঠানো ‘ওয়েসিস অব দ্য সিজ’ ও ‘অ্যালিউর অব দ্য সিজ’ নাম দুটি নির্বাচন করা হয়।

একসময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ ছিল টাইটানিক। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথম যাত্রাতেই সেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল। ডুবে থাকা এক সুবিশাল বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কায় বিলীন হয়ে গিয়েছিল তা আটলান্টিকের অতল গভীরতায়। অথচ এর ক্যাপ্টেন যাত্রা শুরুর সময় বেশ গর্ব করেই বলেছিলেন, ‘টাইটানিক কোনোদিনও ধ্বংস হওয়ার নয়। এমনকি স্বয়ং ঈশ্বরও এর কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারবেন না।’ সেই ঘটনার প্রায় এক শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। এ সময়ে নির্মিত হয়েছে বহু জাহাজ, সর্বশেষ ইতিহাসের বৃহত্তম ও বিলাসবহুল প্রমোদতরি অ্যালিউর অব দ্য সিজ ও ওয়েসিস অব দ্য সিজ।
বিলাসবহুল এই জাহাজ দুটি আকারে টাইটানিকের চেয়ে পাঁচ গুণ বড়। এর আগে সর্ববৃহৎ জাহাজ ছিল ইনডিপেনডেন্স/ফ্রিডম অব দ্য সিজ, যার তুলনায় এই দুটি জাহাজ পাক্কা ৭৫ ফুট লম্বা।

অ্যালিউর অব দ্য সিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১ হাজার ১৮৭ ফুট দৈর্ঘ্যের, ১৯৮ ফুট প্রস্থের এবং ২৩৬ ফুট উচ্চতার এই জাহাজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ১ ডিসেম্বর ২০১০ সালে। আর ১ হাজার ১৮৬ ফুট ১০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের, ২০৮ ফুট প্রস্থের এবং ২৩৬ ফুট উচ্চতার (পানির ওপরে) ওয়েসিস অব দ্য সিজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে ৫ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে। এটির নির্মাণ ব্যয়ও ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আড়াই বছর সময় নিয়ে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। জাহাজ দুটির গতি ২২ দশমিক ৬ ন্যাটিক্যাল মাইল বা ঘণ্টায় ৪১ দশমিক ৯ কিলোমিটার।
জাহাজ দুটি ২০ তলার। এতে রয়েছে সুইমিং পুল, টেনিস-ভলিবল-বাস্কেটবল কোর্ট, বাচ্চাদের জন্য ছোট পার্ক, তরুণদের জন্য থিমপার্ক, চারিদিকে গ্যালারি-বেষ্টিত সুবিশাল মাঠ এবং বরফবেষ্টিত মাঠ।

এই মুহূর্তের বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ অ্যালিউর অব দ্য সিজে যাত্রীদের জন্য রয়েছে ১৬টি ডেক। নাচের জন্য ডেক রয়েছে দুটি। দর্শকদের জন্য রয়েছে ১ হাজার ৩৮০ আসনের একটি থিয়েটার হল। আছে সৌরচুল্লি, যা থেকে প্রাপ্ত ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ জাহাজের বিদ্যুতের চাহিদার অনেকাংশ মিটিয়ে থাকে। এই প্রমোদতরির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ২৯৬ জন। ক্রু আছেন ২ হাজার ৩৮৪ জন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর জাহাজ ওয়েসিস অব দ্য সিজের ওজন ২ লাখ ২৫ হাজার ২৮২ টন। সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৬ হাজার ২৯৬ জন। ক্রু রয়েছেন ৬৫টি দেশের ২ হাজার ১৬৫ জন। এতে রয়েছে ১৬টি ডেক, ৭০০ কেবিন, চারটি সুইমিং পুল এবং টেনিস, ভলিবল ও বাস্কেটবল কোর্ট।

ওয়েসিস অব দ্য সিজে রয়েছে একটি পার্ক বা উদ্যান, যেখানে ১২ হাজার গাছের চারা এবং ৫৬টি গাছ রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই প্রথম ভাসমান উদ্যান। জাহাজের পেছনের অংশে রয়েছে ৭৫০ আসনের থিয়েটার হল, যার মধ্যে রয়েছে সুইমিং পুল। জাহাজের এই জায়গাটি দিনে ব্যবহৃত হয় সুইমিং পুল হিসেবে, আর রাতে ব্যবহৃত হয় থিয়েটার হল হিসেবে।
এই প্রমোদতরির প্রায় প্রতিটি অংশেই রয়েছে বার, পোশাক ও বিভিন্ন দ্রব্যাদির দোকান আর রেস্টুরেন্ট। আর হেঁটে বেড়ানোর জন্য সুদৃশ্য জায়গা তো আছেই। বিলাসবহুল এই জাহাজে ভ্রমণের জন্য টিকিটের মূল্য সর্বনিম্ন ১ হাজার ২৯৯ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮২৯ ডলার পর্যন্ত (এই রেট পরিবর্তন হয়)।

ভাসমান এই নগরীতে থাকছে একটি পুরোদস্তুর ইলেকট্রিক কোম্পানি। ইঞ্জিন থেকে আইস কিউব পর্যন্ত সবকিছুর প্রাণই হলো ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ দিয়ে ১ লাখ বাড়ির চাহিদা মেটানো সম্ভব।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, ইউএসএটুডে, ডেইলি টেলিগ্রাফ, বাহামাস উইকলি।



পিএনএস/সাইয়িদুজ্জামান/শাবী

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন