অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

পিএনএস ডেস্ক : নড়াইলে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনাসদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার বাসগ্রাম ইউনিয়নের শালিখা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম ডাবলু শেখ (৪৭)। তিনি শালিখা গ্রামের আবদুস সালাম শেখের ছেলে।

গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, বাসগ্রাম ইউনিয়নের শালিখা গ্রামের বাবলুর রহমানের সঙ্গে এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাশের কামাল প্রতাপ গ্রামের মাতবর মাহাবুবুল আলম বিদ্যুৎ জমাদ্দারের অনেক দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বাবলুর রহমান বাসগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গতকাল রাতে শালিখা বাজারে বাবলুরের ছোট ভাই আমিরুল শেখের দোকানে বসে ডাবলু শেখ টেলিভিশনে আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) দেখছিলেন। রাত ১০টার দিকে কামাল প্রতাপ গ্রামের মাতবর বিদ্যুৎ জমাদ্দারের নেতৃত্বে ২০–২৫ জন দুর্বৃত্ত দোকানে ঢুকে ভাঙচুরের চেষ্টা করলে ডাবলু শেখ এতে বাধা দেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে।

আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শালিখা ও কামাল প্রতাপ পাশাপাশি গ্রাম। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জমাদ্দার বংশের বেশির ভাগ বাড়ি পুরুষশূন্য। লুটপাটের আশঙ্কায় পরিবারগুলোর নারী সদস্যরা বাড়ির আসবাব, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি স্বজনের বাড়িসহ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারজন নারী বলেন, ‘মানুষ মারে ফেলিছে, বাড়িঘর দরজা ভাঙচুরসহ লুটপাট হতি পারে। এ জন্যি আগেরতে মালামাল সরায়ে ফেলতিছি।’ তাঁরা জানান, বাড়ির পুরুষেরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন।

বাসগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবলুর রহমান বলেন, ‘ডাবলু শেখ আমার ভাই। তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে অবসরে যান।’ তিনি বলেন, পাশের কামাল প্রতাপ গ্রামের মাতবর এবং কামাল প্রতাপ এস জে ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক এস এম মাহাবুবুল আলমের সঙ্গে তাঁর অনেক দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিদ্যুৎ ২০-২৫ জন লোক নিয়ে তাঁর ভাইয়ের দোকানে প্রবেশ করে ভাঙচুর করতে থাকলে ডাবলু বাধা দেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁর ভাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

বাসগ্রাম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মকছু শেখ বলেন, ডাবলু শেখের হাত, ঘাড় ও বুকে একাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে। সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় স্কুলমাঠে জানাজা শেষে কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি বলেন, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

মুঠোফোনে মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘সদর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আমরা নৌকা প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কাজ করি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবলুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী বিলো বিশ্বাসের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেন।’ তিনি দাবি করেন, নির্বাচনী টাকাপয়সা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের লোকের মধ্যে গোলযোগের সূত্র ধরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

পিএনএস/জে এ