পিএনএস ডেস্ক : তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, ভোজ্যতেল বিক্রিতে শর্তজুড়ে দিলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, বাজারে তেলের সঙ্গে চাল, আটা ও চা পাতাসহ নানা ধরনের পণ্য কিনতে ভোক্তাদের শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। বাজারে এসবের প্রমাণ মিলেছে কিন্তু তেল রিফাইনকারী কোম্পানিগুলো তা অস্বীকার করছে। আমরা বাজারে কোথাও এ অবস্থা দেখতে পেলে কোম্পানি ও ডিলারদের জরিমানা করব।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ টিসিবি ভবনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেলের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে অবহিত, মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ভোক্তার পরিচালক ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ভোজ্যতেল মিল মালিক, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা, খুচরা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিরা।
ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা রাজধানীর ৪টি বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি খুচরা দোকানে তেল কম, ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তেলের সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে রশিদ দেখাতে পারছে না। এসও করে নির্দিষ্ট সময়ে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। তা ছাড়া খোলা ভোজ্যতেলের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোতলজাত তেলের চেয়ে বেশি।
মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, বাজারে পাম তেল সরকারি দরের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে সয়াবিন তেল নিয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। তেলের ক্ষেত্রে আমরা ৬ টি রিফাইন প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। গত ৩-৪ মাস যাবত তেল নিয়ে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ভোজ্যতেল মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, পরস্পরের মধ্যে কাদাছুড়াছুড়ি বাদ দিতে হবে। কোম্পানিগুলো তেল এনে রিফাইন করেন, আর আমরা তা বিক্রি করি। কয়েক বছর ধরে ট্যারিফ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
তিনি কোম্পানিগুলোকে বলেন, দরকার পড়ে আবার দাম ঠিক করে নেন, তারপরও বাজার ঠিক রাখেন। ভোক্তাদের হয়রানি করবেন না। আমরা এবারের রমজানটা হালালভাবে ব্যবসা করতে পারি সেই কথা দিতে হবে কোম্পানিগুলোকে। তিনি সামান্য ব্যত্যয়ের জন্য ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের জরিমানা না করার আহ্বান জানান।
ভোক্তার তদন্ত সম্পর্কে নিউ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, বাজারে ৫ লিটারের তেল নেই, আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। ডিলাররা জানাচ্ছেন সরকারের সঙ্গে কোম্পানির আলোচনা হচ্ছে, দাম বাড়ালে তেল বাজারে চলে আসবে। কেননা কোম্পানির কাছে পর্যাপ্ত তেল আছে। বর্তমানে বাজারে তেলটাই বড় সমস্যা। বাজারে কোন কোম্পানির তেল নেই। ৫ কার্টন চাইলে ১ কার্টন দেওয়া হয়। তেল দিলে পোলাওয়ের চাল, আটা, লবণ, চা পাতাসহ অন্যান্য পণ্য কেনার শর্তজুড়ে দেয়। তেলের অর্ডার নিয়ে না জানিয়ে এসব পণ্য দিয়ে যায়।
এ পর্যায়ে ভোক্তার ডিজি বলেন, কেউ শর্ত আরোপ করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এমআরপি মিল গেটে দিলে বিক্রেতারা কেন নিবে।
তিনি বলেন, সিটি গ্রুপ গত ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে ১৫৭ টাকায় ও বিকালে ১৭৫ টাকায় এমারপি করছে। এব্যাপারে সিটি গ্রুপকে জবাবদিহি করা হয়।
এসও সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্ধারিত তারিখে মাল দেওয়া হয় না। আমরা এ ব্যাপারে কঠোর হবো। কারওয়ান বাজারের বসুন্ধরা ও সেনা কল্যাণের ডিলার আব্দুর রহমন বলেন, কোম্পানিগুলো কয়েক মাস ধরে তেল দেয় না।
এ পর্যায়ে ডিজি বলেন, প্রতিদিন তেলের উৎপাদন কত কোম্পানিগুলোকে তা দৈনিক ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাতে হবে। এ জন্য সফটওয়ার তৈরির দায়িত্ব দেন কোম্পানিগুলোকে।
এ পর্যায়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, এসওতে হাতবদলে দাম বেড়ে যায়। আমাদের অর্ডার নিয়ে ১৫-২০ দিন ধরে ট্রাক বসিয়ে রাখা হয়। ময়দার বস্তায় তীর কোম্পানি ২০০ টাকা বাড়িয়েছে। তারা মাল দিচ্ছে না।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, ৫ তারিখে ৭ কার্টন মাল পেয়েছি, তখন ৪০ কেজি পোলাওয়ের চাল দিয়েছে। রুপচাদা ২০ কাটন তেলে ১ বস্তা পোলাওয়ের চাল ও ১ কার্টন সরিষার তেল দিয়েছে। এজন্য কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করার আহ্বান জানান।
এ সময় ভোক্তার ডিজি বলেন, শর্তযুক্ত বিক্রি নিন্দনীয়। এ অবস্থা করলে শাস্তি দেওয়া হবে। বর্তমানে যে পরিমাণ রিফাইন হচ্ছে তা দ্বিগুণ করতে হবে।
এমএস শাহনেওয়াজ এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোহাম্মদ আলী বলেন, টি কে ও সিটি গ্রুপকে জরিমানা করতে হবে। আবুল খায়ের ১৭০ টাকা করে খোলা তেল বিক্রি করছে।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম বলেন, সরকার ইতিপূর্বে মূল্য কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, এজন্য কিছু কমানো হয়। বিদেশ থেকে সয়াবিন আসতে ৫০-৬০ দিন ও পাম তেল ১০-১২ দিন সময় লাগে। বর্তমানে সবাই গতানুগতিক সরবরাহ করছে। এমনকি সরকারি দরের চেয়ে ১৫ টাকা কম দামে পামতেল বিক্রি হচ্ছে। রোজা উপলক্ষে টি কে দ্বিগুণ এলসি করেছে। সেপ্টেম্বরের এলসি অক্টোবরে করা হয়েছে। এসব ডিসেম্বরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ব্রাজিলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা দেরি হয়েছে। আগামী ২৪ তারিখে বড় ধরনের টালান আসবে ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পর তেলের সংকট হবে না।
এসময় তিনি টিসিবি কেন তেল আমদানি করে না বলেও প্রশ্ন রাখেন। বলেন, তারা কেন প্রাইভেট কোম্পানি থেকে কিনবে? দেশে এক সময় ৪৮টি রিফাইনারী ছিল লোকসান দিতে দিতে তার মধ্যে ৮টি টিকে আছে।
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, ড্রাম ও বোতলে ডিলারদের কাছে তেল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
পিএনএস/এএ
ভোজ্যতেলের সঙ্গে পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করলে শাস্তি
16-02-2025 04:29PM
