পিএনএস ডেস্ক: দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে ভোজবাজিতে মেতেছে দুষ্টুচক্র। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে দাম, অন্যদিকে দেশের বাজারে সরবরাহও বাড়ানো হয়েছে চাহিদার তুলনায় বেশি। এরপরও দেশের প্রায় প্রতিটি বাজারে হাহাকার।
বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়েও সয়াবিন তেল কিনতে পারছে না ক্রেতা সাধারণ। ১-২ লিটারের বোতল যা-ও একটু মিলছে, ৫ লিটারের বোতল একরকম উধাও। ফলস্বরূপ, খোলা তেলও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। অনেক বাজারে আবার চাল-ডাল-আটা কেনার শর্তে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন মুদি দোকানিরা। মোটকথা, ভোজ্যতেল, বিশেষ করে সয়াবিন তেল নিয়ে এক ধরনের অরাজকতা চলছে বিগত কয়েক মাস ধরে, যার সুরাহা করতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ সরকার ও প্রশাসন।
কয়েকদিন আগে দেশের শীর্ষ ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। বৈঠকে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, তেলের কোনো সংকট নেই। বরং আগের চেয়ে এখন সরবরাহ বেশি দেওয়া হচ্ছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ অনেক বেশি।
সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাব চক্রবর্তী বলেন, সিটি গ্রুপ গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ টন তেল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ২৪২ টন বোতলজাত। ঠিক গত বছরের একই সময় (জানুয়ারি ২০২৪) তারা ১৪ হাজার ২৬২ টন বোতলজাত তেল সরবরাহ করেছিল বাজারে। অর্থাৎ, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি সয়াবিন তেল বাজারজাত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভোজ্যতেলের বাজারে আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, মেঘনা জানুয়ারিতে ৪৭ হাজার ৬৬৮ হাজার টন তেল সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার টন বোতলজাত তেল। পূর্ববর্তী বছরে সরবরাহ ছিল ২৫ হাজার টন, যার মধ্যে ১২ হাজার টন বোতলজাত ছিল। অর্থাৎ, এ প্রতিষ্ঠানটিও গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ সয়াবিন তেল বাজারে সরবরাহ করেছে এবার।
একইভাবে তেলের সরবরাহ বাড়ানোর তথ্য দিয়েছেন টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতাহার তসলিমও। টিকে গ্রুপের সরবরাহ আগের বছর ছিল সাড়ে নয় হাজার টন, যা এখন ১১ হাজার ৮১০ টন হয়েছে।
এরপর অন্যান্য তেল সরবরাহকারীদের তথ্যও নেওয়া হয়। সবার তথ্য নিয়ে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ বেশি।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এও জানিয়েছেন, রমজান উপলক্ষে পাইপলাইনে বেশ কিছু ভোজ্যতেলভর্তি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করার অপেক্ষায় আছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এগুলো স্থানীয় সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হবে। পাইপলাইনে থাকা এই ভোজ্যতেলের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ টন।
তারপরও বাজারে কেন সংকট এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা নিজেদের পর্যবেক্ষণ থেকে জানান, মাঠ পর্যায়ে কেউ কেউ অতিরিক্ত মজুত করে থাকতে পারে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় বোতল কেটে খোলা তেল হিসেবে বেশি দামে বিক্রি করছে।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশে মূল্য বেশি হওয়ায় পাচার হওয়ারও আশঙ্কার আছে বলে জানান সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের আমদানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। ঋণপত্রও (এলসি) বেড়েছে একই হারে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববাজারেও এখন পণ্যটির মূল্য স্থিতিশীল।
ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই ভোজ্যতেল নিয়ে সমস্যা চলছে দেশের বাজারে। কিন্তু বাজার তদারকিতে তা ধরা পড়ছে না; পড়লেও সেটি হয়তো চেপে যাওয়া হচ্ছে। যারা এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, সরকারের বাজার তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে অর্থাৎ আইনানুগ ব্যবস্থার বাইরেই থেকে যাচ্ছে তারা।
এদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে দূর হবে। এ ছাড়া রমজান সামনে রেখে ছোলা, বুট, খেজুর, ডাল, চিনির দাম অস্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ নেই। এসব পণ্যের সংকটও নেই।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
বাড়তি সরবরাহ সত্ত্বেও কারসাজিতে বাজারে ভোজ্যতেলের হাহাকার
13-02-2025 10:12AM
![](/static/image/upload/news/2025/02/13/40585abc0407ff8b58d21ef60a6204e1_04.png?w=550&h=350)