নিজস্ব প্রতিবেদক: জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও মায়ের সূত্রে তার বাংলাদেশের হয়ে খেলার যোগ্যতা ছিল। ফিফা ও ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নিয়মনীতি মেনে বাংলাদেশের জাতীয়তা পেয়েছেন হামজা। এখন তার গায়ে শুধু লাল-সবুজ জার্সি ওঠার অপেক্ষা।
এটা বাংলাদেশের জন্য বিশাল অর্জন। বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জমজমাট লিগ হিসেবে বিবেচিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড় হামজা। ২০১৫-১৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতা লিস্টার সিটির খেলোয়াড় এই মিডফিল্ডার। বাংলাদেশের ফুটবল বাস্তবতায় হামজার চেয়ে বড় মাপের খেলোয়াড় বর্তমান দলে কেউ নেই। প্রিমিয়ার লিগে খেলা প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি তিনি।
হামজা যোগ দিলে মার্কেট ভ্যালু তরতরিয়ে বাড়বে বাংলাদেশের। ট্রান্সফার মার্কেটে হামজার বর্তমান দাম সাড়ে ৪ মিলিয়ন ইউরো। এই মিডফিল্ডার বাংলাদেশের হওয়ায় মার্কেট ভ্যালুতে ভারতকে ছাড়িয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
স্বভাবতই তার আগমনে ফুটবলে লেগেছে নতুন হাওয়া। ফিফা র্যাংকিংয়ে ১৮৫ নম্বরে থাকা দলের স্বপ্নকাণ্ডারি হয়ে উঠেছেন। হামজার মাঠের উপস্থিতিতে দেশের ফুটবল কতটা বদলাবে- সেটা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। তবে তিনি বাংলাদেশের খেলোয়াড় হওয়ার ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আনন্দের মাঝে আশঙ্কার স্রোতও বয়ে যাচ্ছে।
বাসস্থান-যাতায়াত
আভিজাত্য-প্রযুক্তিতে ইউরোপ অনেক এগিয়ে। জীবনযাপনের মানও তাদের উঁচুতে। ইউরোপে জন্ম-বেড়ে ওঠা একজনের বাংলাদেশে এসে মানিয়ে নিতে কষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। এই সমস্যার কথা জেনেবুঝেই হয়তো বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন হামজা। কিন্তু খেলোয়াড়ি ব্যারিয়ার ভাঙতে পারবেন তো?
আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল কিংবা টুর্নামেন্ট খেলতে বাংলাদেশ দল যে বিমানে চলাফেরা করে, চার্টার্ড ফ্লাইটে চড়া হামজার সেটার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য। হ্যাঁ, বাফুফে এই মিডফিল্ডারের জন্য আলাদা ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারে। তাতে সমস্যা বাড়বে বৈকি, কমবে না। দলের বিশেষ একজনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা অন্য খেলোয়াড়রা মানবেন কেন!
একই কথা বলা যায় থাকার জায়গা নিয়ে। ক্যাম্প হলে বাংলাদেশের ফুটবলারা থাকেন তিন তারকা হোটেলে। সেখানে প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা থেকে অভ্যস্ত ফাইভস্টার-সেভেনস্টার হোটেলে। হামজাকে হামজার মতো ট্রিট করতে গেলে তাকে অমন হোটেলেই রাখতে হবে। সেটাও-বা দলের অন্য খেলোয়াড়রা মানবেন কেন! তাহলে? থ্রি স্টার হোটেলে থাকতে রাজি হবেন হামজা?
মাঠ
থাকা-যাতায়াতের ব্যাপার গেল। এবার মাঠে ফেরা যাক। হামজা ৮ বছর বয়সে ফুটবল শুরু করেছেন লিস্টার সিটির একাডেমি দিয়ে। সেখানকার সুযোগ-সুবিধা টপ ক্লাস। মাঠের সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতো। এরপর ইংলিশ ক্লাবটির মূল দলে সুযোগ পেয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, অ্যানফিল্ড, ইত্তিহাদ, এমিরেটস স্টেডিয়ামের মতো মাঠে খেলছেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবল বিরতিতে তিনি সেখানে থেকেই সরাসরি আসবেন বাংলাদেশে। দেশের মাঠগুলোর যে অবস্থা, ইংল্যান্ডের ওই সব মাঠের সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনা করা যায় না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা সুন্দর, তবে প্রিমিয়ার লিগে মাঠের সঙ্গে তুলনা চলে না।
কোচের সঙ্গে বোঝাপড়া
বাংলাদেশ দলের বর্তমান কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তার অধীনেই খেলবেন হামজা। প্রশ্ন হলো, হামজাকে সামলানোর মতো সামর্থ্য আছে কি এই স্প্যানিশ কোচের? হামজা খেলেছেন ক্লাউদিও রানিয়েরি, ব্রেন্ডন রজার্স, ডিন স্মিথ, এনজো মারেস্কার মতো কোচদের অধীনে। এখন খেলছেন রুদ ফন নিস্টলরয়ের অধীনে। তাদের ধারেভারে অনেক পিছিয়ে কাবরেরা।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হাভিয়ের কাবরেরা
তারকা খেলোয়াড়দের সামলাতে বড় বড় কোচদের প্রায়শই হিমশিম খেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কোচদের চাকরিও যায়। বাংলাদেশের ফুটবলে হামজা ওই বড় তারকার জায়গা নিচ্ছেন। তাও আবার তিনি আসবেন প্রিমিয়ার লিগের অভিজাত ফুটবল থেকে। বলাই যায়, কাবরেরার কাজও কঠিন হচ্ছে।
লিস্টার সিটির অনুমোদন
ক্লাব-জাতীয় দলের দ্বন্দ্বও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এখানে। বাংলাদেশের মাঠগুলোর যে অবস্থা, খেলোয়াড়দের ইনজুরি ঝুঁকি থাকে মারাত্মক। হামজার ইনজুরি ঝুঁকির কথা চিন্তা করে লিস্টার সিটি তাকে ছাড়বে কিনা, এ প্রশ্নও তোলা যায়। যদি ছাড়েও, সেটা বাংলাদেশ ম্যাচ শুরুর তিন-চার দিন আগে। এই অল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণক্লান্তি সামলে দলের সঙ্গে কয়টা অনুশীলন সেশন পাবেন হাজমা। সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য এই সময়টা কি যথেষ্ট?
হামজা হয়তো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়েই এসেছেন। সেটা হলেই মঙ্গল। তাহলেই প্রিমিয়ার লিগ ও বাংলাদেশের ফুটবলের একটা মেলবন্ধন হবে। হামজাকে দিয়ে তো সেটা মেলানোই যায়!
এসএস
হামজা চৌধুরীতে আশা, আছে শঙ্কাও
26-12-2024 08:24PM