বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ে দপ্তরে যেতে পারছেন না যশোরের জনপ্রতিনিধিরা

  18-08-2024 08:58PM

পিএনএস ডেস্ক: কর্মস্থলে যোগদান করতে গিয়ে বাধা ও হামলার মুখে পড়েছেন যশোরের জনপ্রতিনিধিরা। রোববার (১৮ জুলাই) উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা তাদের দপ্তরে যেতে পারেননি।

জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের দপ্তরে অবস্থান নিয়েছেন। কোথাও কোথাও হামলা করেছেন। হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছেন। ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোরে স্থানীয় সরকারে চার স্তরের এক হাজার ৩২৩ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যান। তবে তাদের অনেকেই রোববার নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগকারীদের দাবি, রোববার সকাল থেকেই দপ্তরের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় দপ্তর। লুট করা হয়েছে জনপ্রতিনিধিদের হাজিরা বইসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিও। এসব ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী জনপ্রতিনিধি। তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছে জেলা বিএনপি। আর প্রশাসন বলছে, বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোরে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা—এ চার স্তরে এক হাজার ৩২৩ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এরমধ্যে ৯১টি ইউনিয়নে এক হাজার ১৮৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার, ৮টি উপজেলায় ২৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ৮টি পৌরসভায় ১০৪ জন পৌরমেয়র ও কাউন্সিলর এবং জেলা পরিষদের ১২ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্য জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের অনেকেই রোববার নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু উপজেলা পরিষদে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারেন—এমন খবরে রোববার সকাল থেকে বিএনপির একদল নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তারা উপজেলা পরিষদ ভবনে হানা দেন এবং চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরিষদে যাওয়ার পথে এ খবর পেয়ে ফিরে যান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অফিসে যেতে পারিনি। আজ সকালে অফিসে যাওয়ার পথে শুনি সন্ত্রাসীরা অফিসের নিচে অবস্থান করছে। অফিসে হামলা চালিয়েছে। নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় আমি আর অফিসে যাইনি। নিয়মিত অফিসে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত দিয়েছি।’

বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবীর বিপুল ফারাজী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা ও জনগণের দায়বদ্ধতা থেকেই আজ সকাল ৯টা ৭ মিনিটে উপজেলা পরিষদে প্রবেশ করি। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে উপজেলা পরিষদের মধ্যে জড়ো হয়। বিগত আমলে নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হবে না বলে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি গাড়িতে করে গ্রামের বাড়ি চলে আসি।’

বাঘারপার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে প্রবেশ করেন বাঘারপাড়া পৌরসভা কার্যালয়ে। ওইসময় পৌর মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চু উপস্থিত ছিলেন না। তবে অফিসে বসা কয়েকজন কাউন্সিলরকে বের করে দেন নেতাকর্মীরা। মারধর ও লাঞ্ছিত করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলামকে।

তিনি বলেন, ‘আমরা পৌরসভায় নিয়মিত কার্যক্রম করছিলাম। এমন সময় স্লোগান দিতে দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পৌরসভায় হামলা করে। এসময় কয়েকজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে ও বের করে দেয়। হাজিরা খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও তারা নিয়ে গেছে।’

কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টানা ২২ বছর ধরে কাউন্সিলর আমি। কাউকে অপমান-অপদস্থ করিনি। অথচ আজ নোংরা রাজনীতির বলি হতে হলো।’

এদিকে, যশোর পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ রোববার পৌর ভবনে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। লাঞ্ছিত হয়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে তিনি আর দপ্তরে অফিস করতে পারেননি। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে চাননি তিনি।

সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর একদিন মাত্র অফিসে গেছি। বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকিতে যেতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নেন ইউপি কার্যালয়ে। একপর্যায়ে সব মেম্বারকে তিনি বের করে দেন। কাউকে অফিস করতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। অনেক মেম্বারকে হুমকিও দিয়েছেন তিনি। এমন অবস্থায় তো পরিষদ চালানো যায় না।’

এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা না করার জন্য। সেভাবে আমরা নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। সরকার যতদিন তাদের রাখবে, তারা ততদিন জনপ্রতিনিধি। আমাদের কোনো নেতাকর্মী তাদের বাধা দেবে না।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের বাধা দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানাবো।’

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন