পিএনএস ডেস্ক: কথা ছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চুক্তি হওয়া টাকা দিলে সন্ধান দেওয়া হবে চুরি যাওয়া বৈদ্যুতিক মিটারের। টাকা পরিশোধ করার পর মুঠোফোনে কথা হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু মিটারের সন্ধান দেওয়া হয়নি ২৩ গ্রাহকের। তবে তিনজন গ্রাহকের মিটার ফেরত দিয়েছে চোর। রাজশাহীর বাগমারায় বৈদ্যুতিক মিটার চুরির পর চোর এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বাণিজ্যিক, চালকল ও সেচপাম্পের ২৬টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়। মিটার চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর একটি চিরকুট রেখে যায় চোর। সেখানে যোগাযোগের একটি মুঠোফোন নম্বর ও টোকেন নম্বর লেখা ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা ওই নম্বরে যোগাযোগ করে মিটার ফেরত পেতে দর-কষাকষি করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ জন গ্রাহকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, থানা-পুলিশের ঝামেলা ও বিদ্যুৎ বিভাগের হয়রানি এড়াতে তাঁরা চুরি হওয়া মিটার উদ্ধারে সরাসরি চোরের সঙ্গে কথা বলেন। চোর প্রথমে ১০ হাজার টাকা দাবি করে, পরে দর-কষাকষি করে দুই হাজার টাকায় নিয়ে আসেন। পরে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে টোকেন নম্বর জানান। এরপর চুরি করা মিটারের সন্ধান দিচ্ছে চোর। তবে টাকা নেওয়ার পরও ২৩ জনের মিটার ফেরত দেওয়া হয়নি। দুই দিন ধরে চোর বিভিন্ন রকম টালবাহানা করছে।
চালকলমালিক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টাকা পরিশোধের পরও আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মিটার ফেরত পাননি। মুঠোফোনে কথা বলেও লাভ হচ্ছে না। আরও টাকা দাবি করছে চোর। তিনি জানান, গ্রামের এক সেচপাম্পের মিটার দুই হাজার টাকার বিনিময়ে ফেরত দিয়েছে চোর। এতে চোরের প্রতি আস্থা রেখে টাকা দিয়ে এখন প্রতারিত হয়েছেন তাঁরা।
ওই সেচপাম্পের পরিচালক আবুল কালাম এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। একডালা গ্রামের রোকনুজ্জামান নামের এক গ্রাহক জানান, টাকার বিনিময়ে একটি মিটার ফেরত পেয়েছেন পাশের লাউপাড়া গ্রামের একটি খড়ের পালার ভেতর থেকে। তবে আরেকটির টাকা দেওয়া হলেও ফেরত পাননি।
এদিকে মিটার ফেরত না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকেরা। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বাগমারা থানার প্রধান ফটকের সামনের চালকলের পরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, তিনি চোরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন গত বুধবার। তবে চোর বিভিন্ন সময়ে নানা রকম কথা বলে হয়রানি করছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেও ফল পাননি। পুলিশকে চোরের মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। পুলিশ উল্টো বিদ্যুৎ কার্যালয় থেকে মিটার কিনে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে গিয়ে কোনো সুরাহা পাচ্ছি না, আবার চোরও কথা রাখেনি, এটা নিয়ে মহাবিপদে আছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চোরের দেওয়া একটি নম্বরে কল করলে তিনি স্বীকার করেন, এক রাতে তিনি ২৬টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করেছেন। তিনি টোকেন নম্বর নিয়ে তা দেখবেন জানিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম মিটার চুরির ঘটনায় থানায় জিডি নথিভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর বাগমারা আঞ্চলিক দপ্তরের মহাব্যবস্থাপক মোস্তফা আমিনুর রাশেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা জিডির কপিসহ আবেদন করে অফিস থেকে নিয়ম অনুযায়ী নতুন বৈদ্যুতিক মিটার সংগ্রহ করতে পারবেন।
এসএস
টাকা নিয়েও সন্ধান মিলেনি চুরি যাওয়া বৈদ্যুতিক মিটারের
27-12-2024 05:57PM